মনে কর তোমার এলাকায় গম, আলু, কলা, ধান, ইত্যাদি কৃষিপণ্য এবং কাপড়, বিস্কুট, প্লাস্টিক ইত্যাদি শিল্পপণ্য উৎপাদিত হয়। এই কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্য উৎপাদনে অনেকগুলো উপকরণের প্রয়োজন হয় । কৃষকের ধান উৎপাদন করতে জমি, বীজ, সার, লাঙ্গল, সেচ, শ্রমিক ইত্যাদির প্রয়োজন হয় । আবার শিল্পপণ্যের জন্য কারখানা, বিল্ডিং, কাপড়, সুতা, মেশিন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ময়দা, চিনি, তৈল, শ্রমিক লাগে । এসব দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করতে আবার প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন মাটি, মাটির উর্বরতা শক্তি, আলো-বাতাস, পরিবেশ, খনিজ দ্রব্য, সূর্য কিরণ, পানি, আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় । এখানে যেসব দ্রব্যের কথা বলা হলো, এগুলো হচ্ছে উৎপাদনের উপকরণ । অতএব কোনো কিছু উৎপাদনের জন্য যেসব দ্রব্য বা সেবাকর্ম প্রয়োজন হয়,সেগুলোকে উৎপাদনের উপকরণ বলে ।
উৎপাদনের উপকরণ মূলত চার ধরনের হয়। যেমন : ১. ভূমি (Land), ২. শ্রম (Labour), ৩. মূলধন (Capital), এবং ৪. সংগঠন (Organisation)
১. ভূমি : উৎপাদনে সাহায্য করে এমন সব প্রাকৃতিক সম্পদকে ভূমি বলে । যেমন, জমি, মাটি, মাটির উর্বরতা শক্তি, খনিজ দ্রব্য, বনজ ও জলজ সম্পদ, সূর্য কিরণ, বৃষ্টিপাত, আবহাওয়া প্রভৃতি সব রকম প্রাকৃতিক সম্পদ ভূমির অন্তর্ভুক্ত ।
২. শ্ৰম : উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মানুষের সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমকে শ্রম বলে । উৎপাদনে চাষি, জেলে, কামার, কুমার, তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকের কায়িক পরিশ্রমকে শ্রম বলে । আবার অফিস - আদালতের কর্মচারী-কর্মকর্তার শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমকেও শ্রম বলা হয় । একইভাবে শিক্ষকের শিক্ষাদান, ডাক্তারের সেবা ও উকিলের পরামর্শ এক ধরনের শ্রম ।
৩. মূলধন : মূলধন হলো মানুষ কর্তৃক উৎপাদিত উৎপাদনের উপকরণ । এই উৎপাদিত উপকরণ মানুষ ভোগ না করে নতুন দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহার করে। যেমন-যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, কারখানা, অফিসের আসবাবপত্র প্রভৃতি ।
৪. সংগঠন : সংগঠনকে সমন্বয়কারী বলে । উৎপাদন ক্ষেত্রে ভূমি, শ্রম মূলধন ইত্যাদি উপকরণের মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয় ঘটিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করাকে সংগঠন বলে। সমন্বয় ঘটানো এবং কাজ পরিচালনাকে ব্যবস্থাপনাও বলা হয়। এ কাজটি যে ব্যক্তি সম্পাদন করে থাকেন, তাকে সংগঠক বা উদ্যোক্তা বলে । তাই উদ্যোক্তার বিভিন্ন কাজ, যেমন, কোনো কিছু উৎপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভূমি, শ্রম, মূলধন একত্রীকরণ ও তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা -এসবই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ।
সুতরাং সমগ্র উৎপাদন ব্যবস্থায় ভূমি, শ্রম, মূলধন এবং সংগঠন-এ চারটি উপকরণের যৌথ অংশগ্রহণ অপরিহার্য । এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটির অনুপস্থিতিতে উৎপাদন সম্ভব নয় । অবশ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে সব উপকরণের গুরুত্ব এক রকম নয়। অবস্থাভেদে কোনো উপকরণ বেশি আবার কোনো উপকরণ কম প্রয়োজন হয় । বাংলাদেশ কৃষি প্রধান ও জনবহুল দেশ বলে এখানে মূলধনের তুলনায় ভূমি ও শ্রমের গুরুত্ব বেশি। আবার উন্নত শিল্প প্রধান দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশে ভূমি ও শ্রমের তুলনায় মূলধনের গুরুত্ব বেশি ।
Read more